ঋণখেলাপি ট্যানারি মালিকদের বিশেষ সুবিধা দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তর করা চামড়াশিল্প মালিকদের মধ্যে যারা ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেন, তাদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা অব্যাহত রাখতে পারবে না, তারা ঋণস্থিতির ২ শতাংশ নগদ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে সুদ মওকুফ সুবিধাসহ মূল ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সময় পাবে।
যারা ব্যবসা অব্যাহত রাখতে পারবে, তাদেরকেও সুদ মওকুফের সুবিধাসহ সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল/পুনর্গঠনের (রিশিডিউল/রিস্ট্রাকচার) সুযোগ দেওয়া হবে।
তবে সুদ মওকুফ করা হবে কি না, সে ব্যাপারে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নেবে। অবশ্য, পর্ষদ কোনোভাবেই মূল ঋণ বা আসল মওকুফ করতে পারবে না।
এই সুবিধা নেওয়ার জন্য আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে গ্রাহককে ব্যাংকে আবদেন করতে হবে। আবেদন পাওয়ার তিন মাস, অর্থাৎ আগামী জুনের মধ্যে ব্যাংক তার গ্রাহককে আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।
বুধবার এ সংক্রান্ত সার্কুলার ইস্যু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি)।
সার্কুলারে বলা হয়, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তরিত ট্যানারি মালিকরা নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেকে নিয়মিত ঋণ পরিশোধিত করতে পারছেন না। এসব ঋণ মন্দ ঋণে (ব্যাড লোন) শ্রেণিকৃত (ক্লাসিফাইড) হয়ে পড়েছে। এর ফলে চামড়া শিল্পখাতে স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ বজায় রাখা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না।
ব্যবসা অব্যাহত রাখতে পারবেন না, এমন কারখানা মালিকদের ক্ষেত্রে সার্কুলারে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাদের ঋণস্থিতি ৫ কোটি টাকা ছিল, তারা নগদ ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে দিয়ে ৩ বছরের মধ্যে মূল ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।
একই সময়ে যাদের ঋণস্থিতি ৫ কোটি টাকার বেশি, তারা একই পরিমাণ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে মূল ঋণ পরিশোধের জন্য ৫ বছর সময় পাবেন।
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সুদ মওকুফ না করলে, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা সুদ ও আসল মিলিয়ে হবে।
ব্যবসা থেকে যারা এক্সিট নিতে চান, জামানত হিসেবে ব্যাংকে রাখা তাদের সম্পত্তি গ্রাহকের সম্মতি সাপেক্ষে বিক্রি করতে পারবে ব্যাংক।
যেসব ট্যানারি মালিক সাভারে তাদের ব্যবসা অব্যাহত রাখতে পারবেন, তারা ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ঋণস্থিতির ২ শতাংশ নগদে ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিল/পুনর্গঠন সুবিধা পাবেন। এই সুবিধা নেওয়ার পর ঋণের সুদহার হবে ৯ শতাংশ।
এর আগে যারা ঋণ পুনঃতফসিল/পুনর্গঠন সুবিধা নিয়েছেন, তারাও এই সার্কুলারের আওতায় একই সুবিধা নিতে পারবেন। তবে প্রতারণা কিংবা জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণখেলাপি হলে পুনঃতফসিল/পুনর্গঠনের সুবিধা পাওয়া যাবে না।
এই সুবিধা নেওয়ার পর কোনো গ্রাহক প্রতি মাসে একটি করে ৬টি কিস্তি কিংবা দুটি ত্রৈমাসিক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে সুবিধাটি বাতিল হয়ে যাবে।
পুনঃতফসিল/পুনর্গঠন সুবিধা নেওয়ার জন্য আবেদন করার আগে, অর্থাৎ ৩১ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত যেসব কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে, তাকে ডাউনপেমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।
সার্কুলারের অধীনে সুবিধা গ্রহণের সময় চলমান মামলাগুলো সোলেনামার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা যাবে। তবে কোন গ্রাহক এই সুবিধার কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে সকল সুবিধা বাতিল এবং স্থগিত মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ফরচুনা গ্রুপ ও রুমা লেদার ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবু তাহের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'নগদ ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেওয়াই তো ট্যানারি মালিকদের জন্য অসম্ভব কাজ। ট্যানারি স্থানান্তর ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় মালিকরা নগদ টাকার সংকটে রয়েছেন।'
সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে মালিকদের ব্যবসা পরিচালনা করা সহজ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে সুদ মওকুফ করা উচিত। তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সুবিধার সুফল পাবেন ট্যানারি মালিকরা।