তিন মাসে বৈদেশিক ঋণ কমল ১৪৫ কোটি ডলার
চলতি অর্থবছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ১৪৫ কোটি ডলার কমেছে। আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যসূত্রে তা জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১১২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে। আগের প্রান্তিক অর্থাৎ জুন শেষে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ১১৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে তিন মাসে বৈদেশিক ঋণ কমেছে ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন বা ১৪৫ কোটি ডলার।
এই হ্রাসের পেছনে সরকারি ও বেসরকারি—উভয় খাতের বৈদেশিক ঋণ কমে আসার প্রভাব রয়েছে।
সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৯৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে, যা জুন শেষে ছিল ১৯ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, "বায়ার্স ক্রেডিট কমার কারণে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি কমতে পারে। আমদানি কম হচ্ছে বিধায় বায়ার্স ক্রেডিট কমতে পারে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য তিন মাসে বায়ার্স ক্রেডিট প্রায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার কমেছে। সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের প্রান্তিকে তা ছিল ৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বৈদেশিক ঋণ কমার প্রধান কারণ ছিল নতুন বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হচ্ছে কম এবং আগের ঋণগুলোর অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে বেশি। তাছাড়া বায়ার্স ক্রেডিট কমার কারণে বিদেশি ঋণের মোট স্থিতি ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমেছে।
তিনি আরও জানান, "২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণসীমা কমিয়ে দিয়েছিল। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সেই সীমা ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে। তাতে বলা যায়, এখন ঋণসীমা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলেই বিদেশি ঋণ নিতে পারবেন।"
বর্তমানে বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ সুদের হার পড়ে। আর দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ১২ শতাংশের উপর পড়ে। তাই বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়াই ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা। কারণ তাতে খরচ কমে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, মূলত নতুন বিনিয়োগ কম, তাই ব্যবসা কম হচ্ছে। আর নতুন ব্যবসা কম হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিও কম হয়। এজন্য বায়ার্স ক্রেডিটও কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, অক্টোবর মাস শেষে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। তাতে বোঝা যায়, নতুন ব্যবসা সম্প্রসারণ কম হচ্ছে বলেও ব্যাংক ঋণের চাহিদা কম রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "নির্বাচনের আগে নতুন ঋণ নেওয়ার সম্ভবনা কম। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এমন ট্রেন্ড চলবে। তবে নির্বাচনের পর আবার ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়তে পারে।"
