ফেনীতে ১৪ স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন, অন্তত ৩৫ গ্রাম প্লাবিত

টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর ১৪টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে অন্তত ৩৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
জেলার পরশুরাম উপজেলার নির্বাহী অফিসার ৩৫ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, ফেনী শহরের কিছু কিছু এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও অধিকাংশ এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে।

পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার জঙ্গলঘোনায় দুটি, অলকায় তিনটি, শালধর এলাকায় একটি, ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকায় একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগর এলাকায় একটি ও ফুলগাজীর দেড়পড়া এলাকার দুই স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ফুলগাজীর বাসিন্দা মাসুদুর রহমান বলেন, 'ভাঙন স্থানগুলো দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গেল বছরের বন্যার মতো এবারও মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে ভুগতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।'

পরশুরামের তুলাতলী এলাকার বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, 'এখন চারদিকে থইথই পানি। বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এখনো বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।'
এছাড়া পরশুরাম উপজেলার কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মধ্যে সাতকুচিয়ায় দুটি, বেড়াবাড়িয়ায় একটি ও ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেল থেকে এসব স্থানে ভাঙন দেখা দেয়।

বুধবার সকালে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, 'রাত থেকে বাঁধের কোনো স্থানে নতুন করে ভাঙেনি। লোকালয়ে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আমরা দুর্গতদের পাশে থেকে কাজ করছি।'
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, 'জেলায় টানা তিন দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকালও জেলাজুড়ে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।'

এ ব্যাপারে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, 'আমরা সকাল পর্যন্ত ১১টি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। এই বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।'
তিনি জানান, নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে মধ্যরাত থেকে পানি কিছুটা কমেছে উল্লেখ করে প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, 'উজানে বৃষ্টি বন্ধ থাকলে বাঁধ ভাঙনের শঙ্কা কমবে।'