১৫ বছর পর দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা ১৫ বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরে এসেছেন। থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ভোট শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে দেশে ফিরেছেন তিনি। কিন্তু দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার হতে হয়েছে বিতর্কিত এই থাই রাজনৈতিক নেতাকে। খবর বিবিসির।
একটি ব্যক্তিগত জেট বিমানে করে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ৯ টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা) ব্যাংককের ডন মুয়াং বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এই থাই বিলিয়নিয়ার। এসময় গান গেয়ে ও উল্লাস প্রকাশ করে তাকে স্বাগত জানান বিমানবন্দরে আগত শত শত ভক্ত ও সমর্থক।
কিন্তু সমর্থকদের সেভাবে অভিবাদন জানাতে পারেননি থাকসিন সিনাওয়াত্রা। দুই মেয়ে ও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন এবং রাজা ও রানীর ছবিতে সম্মান প্রদর্শন করেন।
এর পরপরই বিমানবন্দর থেকে সরাসরি থাকসিনকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতে তাকে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং তারপর ব্যাংককের রিমান্ড কারাগারে পাঠানো হয়। তবে তাকে খুব বেশি সময় পুলিশি হেফাজতে রাখা হবে বলে মনে করছেন না কেউ।

ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবের প্রাক্তন মালিক থাকসিন সিনাওয়াত্রা ২০০১ সাল থেকে শুরু করে ২০০৬ সাল পর্যন্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু ২০০৬ সালে যখন তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের একটি সভায় যোগদান করতে গিয়েছিলেন, সেইসময় থাইল্যান্ডে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় বলে সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
২০০৮ সালে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান থাকসিন। মঙ্গলবার দেশে ফেরার পর তাকে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও, বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনি আসলেই এতদিন সাজা ভোগ করবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।
থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে একবার দেখার জন্য সোমবার সন্ধ্যা থেকে ডং মুয়াং বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন ৬৩ বছর বয়সী স্যামনিয়াং কংপোলপারন। থাকসিনের আরও অনেক ভক্তের মতো তিনিও উত্তরপূর্বের সুরিন প্রদেশ থেকে এসেছেন, যেটি গত কয়েক দশক ধরেই থাকসিনের দলের শক্ত ঘাটি হিসেবে বিবেচিত।
এই বৃদ্ধ সমর্থক বলেন, 'তিনি আমার দেখা সবচেয়ে সেরা প্রধানমন্ত্রী। যদিও আজ তার দেখা পাব না, কিন্তু তবুও তাকে সমর্থন জানাতে এসেছি। তারা সামরিকপন্থী সরকারের সঙ্গে মিললেও আমি মেনে নিব, তা নাহলে আমাদেরকে সিনেটরদের সঙ্গেই আটকে থাকতে হবে। সেটা আমরা চাই না।"
মঙ্গলবার থাইল্যান্ডে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে সংসদে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে থাকসিনের ফেউ থাই দলের নেতৃত্বে গঠিত জোটের নেতা হিসেবে আজ স্রেথা থাভিসিনের প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়ার কথা।
দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের পক্ষ নিয়ে রাজনীতি করায় থাইল্যান্ডের শ্রমজীবী ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে থাকসিনের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি এবং তিনি এমন একটি রাজনৈতিক শক্তি তৈরি করেছেন যা গত ২০ বছর ধরে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।