সিলেটে ‘বিকল্প প্রার্থী’ প্রস্তুত রাখছে বিএনপি, বিভিন্ন আসনে একাধিক নেতাকে মনোনয়ন
সিলেটের বিভিন্ন আসনে বিকল্প প্রার্থীকে প্রস্তুত রাখছে বিএনপি। এজন্য এসব আসনে একাধিক ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।
তবে এক আসনে একাধিক ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। তারা কার পক্ষে যাবেন এ নিয়ে সন্দিহান। এছাড়া এর ফলে আগে মনোনয়ন পাওয়া নেতারাও পড়েছেন বিভ্রান্তিতে।
সিলেট-৬, সুনামগঞ্জ-১ ও ২ সহ বিভাগের কয়েকটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে (দিরাই-শাল্লা) প্রবীন নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। তবে গত শনিবার আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেলকেও মনোনয়ন দেয় দলটি।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ভাইরাল হয়। ওই চিঠিতে জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নেতা তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেলের নাম উল্লেখ রয়েছে।
এতে ওই আসনে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
তবে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ-২ আসনে দুজনকেই মনোনয় দেওয়া হয়েছে।
নাছির চৌধুরী এই আসনে পাঁচবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং নির্বাচনি এলাকা দিরাই উপজেলায় দুইবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পরাজিত করে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জানা যায়, ৪ ডিসেম্বর বিএনপি এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে সাবেক সংসদ সদস্য দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির চৌধুরীকে। শনিবার দুপুরে নাছির চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে তার সঙ্গে তাহির রায়হান চৌধুরীও ছিলেন।
কিন্তু সন্ধ্যায় তাহির রায়হান চৌধুরী নিজে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলে এলাকায় আলোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে জানতে তাহির রায়হান চৌধুরী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ এবং দল থেকে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তাহির রায়হান বলেন,'আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। মাঠে কাজ করেছি। কিন্তু আমাকে মনোনয়ন না দিলেও আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। এখন দল থেকে আমাকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি, আজ (সোমবার) জমা দেব।'
এদিকে, সুনামগঞ্জ-১ আসনেও (ধর্মপাশা, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর) একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।
এই আসনে বিএনপি প্রথমে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দলের জেলা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হকের নাম ঘোষণা করে। এরপর গত শনিবার জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
আনিসুল হককে প্রার্থী ঘোষণার পর প্রার্থী পরিবর্তন এবং কামরুলকে প্রার্থী করার জন্য তার কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
সর্বশেষ গতকাল রবিবার বিকেলে একইভাবে নির্বাচনি এলাকার উজান তাহিরপুর গ্রামে কামরুলের সমর্থকেরা সমাবেশ করেন। সেখানে কামরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, 'সমাবেশে শেষে তাহিরপুর থেকে জেলা সদরে ফেরার পথে বিএনপির কেন্দ্র থেকে তাকে ফোন দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সম্পর্কে চাওয়া হয়। তিনি সেটি দেওয়ার পর একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দলীয় মনোনয়নের চিঠি সংগ্রহ করার কথা জানানো হয়।'
কামরুল বলেন, 'আমাকে বলা হয়েছে, এখানে আমিই দলীয় প্রার্থী। সবাইকে নিয়ে যেন নির্বাচন করি।'
এছাড়া, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসনে এবার ফয়সল আহমদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।
শনিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে ফয়সল আহমদ চৌধুরীবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। যা রোববার রাতে জানাজানি হয়।
ফয়সল আহমদ চৌধুরীর মিডিয়া সেল থেকে মনোনয়নপ্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এরআগে, বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার প্রথম ধাপে এ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। দলীয় প্রার্থী হিসেবে এমরান আহমদ প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে, ফয়সল আহমদ সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীকে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন।
প্রথম ধাপে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও মাঠে সক্রিয় ছিলেন ফয়সল। এবার তাকেও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলো।
জানা গেছে, এই দুই নেতাই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আজ শেষ দিনে কারা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন আসনেই বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রাখছে বিএনপি। তাই একাধিক নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে থেকে একজনকে পরে বাছাই করে নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) জিকে গৌছ বলেন, 'কয়েকটি আসনে দলের দুইজন নেতাকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। আগামী ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের সময় একজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন।'
তবে দলের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, 'এতে করে দলে বিভক্তি বাড়বে।'
