বিজয় দিবসের আগের রাতে শরীয়তপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন
শরীয়তপুরে মহান বিজয় দিবসের আগের রাতে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামে গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান খানের কবরে আগুন দেয়। এতে কবরের ওপরের অংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোরে পরিবারের সদস্যরা কবর জিয়ারতে গিয়ে বিষয়টি দেখতে পান। পরে প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়।
জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান খান ২০১০ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রী ও চার সন্তান রেখে যাওয়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কবরটি সুরক্ষিত ছিল। প্রতি বছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসী তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেন। তবে এ বছর বিজয়ের রাতেই কবরটিতে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে স্বাধীনতা ও বিজয়ের প্রতি অবমাননা বলে দাবি করেছে তার পরিবার।
কবরের এমন দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মাহফুজা বেগম। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, 'আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা—এটাই আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় গর্ব। মুক্তিযুদ্ধ করে তিনি এই দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই গর্ব নিয়েই তার কবর আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। বিজয়ের এই রাতে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো চক্র কবরটিতে আগুন দিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করেছে। শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধাকে নয়, তারা পুরো মুক্তিযুদ্ধকেই অস্বীকার করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।'
বাবার কবরের এমন অবস্থা দেখে হতবাক মেয়ে আফরোজা বলেন, 'বিজয়ের সকালে বাবার কবরে এসে দেখি ছাই পড়ে আছে। বুকটা কষ্টে ছিঁড়ে যাচ্ছিল। আজকের দিনে বাবার মুক্তিযুদ্ধের অর্জন স্মরণ করে আনন্দ করার কথা ছিল। কিন্তু কে বা কারা মৃত একজন মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দিয়ে জাতিকে কী বার্তা দিতে চায়—এই প্রশ্নই আমাদের।'
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ সিকদার বলেন, 'বিজয় দিবসে এমন খবর শুনব—কখনো ভাবিনি। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি; এই স্বাধীন দেশে আমাদের মর্যাদাই ছিল সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। জীবিত কিংবা মৃত—সব মুক্তিযোদ্ধাই দেশের সম্মানিত নাগরিক। কবরটিতে আগুন দেওয়ার খবর শুনে বুক ফেটে কান্না আসে। আমরা কমান্ড কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করব।'
এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, 'ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের ফোন পেয়ে বিষয়টি জেনেছি। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
