Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

ঢাকার গুদারাঘাট: কিছু আছে এখনও, বাকিটা শুধুই স্মৃতি!

"ঢাকার জায়গাগুলোর নাম খেয়াল করে দেখুন- কাঁঠালবাগান, বারিধারা, ধানমন্ডি, ঝিলপাড়, ঘাট পাড়, আমতলা, সাঁতারকুল, শ্যামলী, কলাবাগান, শাহবাগ, মতিঝিল, হাতিরঝিল, কদমতলী, খিলক্ষেত, গেন্ডারিয়া, পল্লবী, খিলগাঁও- এমনিভাবে ঢাকার অনেক জায়গার নামের সঙ্গেই বাগান, পতিত জমি, বাগান, ঝিল, বিল, খাল ইত্যাদির যোগ আছে। মোগল আমলে ঢাকার বিস্তৃতি ছিল গুলিস্তান পর্যন্ত, ব্রিটিশ আমলে সেটা শাহবাগ ছাড়িয়ে বেশিদূর আর যায়নি। বাকি জায়গাগুলো ছিল জলাভূমি, এসব জায়গায় শুকনো মৌসুমেও এক মানুষ সমান পানি থাকত। মানে নৌকা চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় নাব্যতা থাকত সারা বছরজুড়েই।"
ঢাকার গুদারাঘাট: কিছু আছে এখনও, বাকিটা শুধুই স্মৃতি!

ফিচার

সালেহ শফিক
06 December, 2023, 10:50 am
Last modified: 06 December, 2023, 10:50 am

Related News

  • গাজীপুরে দুই যুগে কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ বন ও জলাশয়
  • জলাশয় ভরাট করে বিএডিসির ল্যাব নির্মাণ অবৈধ: হাইকোর্ট
  • উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ করছে বিএডিসি

ঢাকার গুদারাঘাট: কিছু আছে এখনও, বাকিটা শুধুই স্মৃতি!

"ঢাকার জায়গাগুলোর নাম খেয়াল করে দেখুন- কাঁঠালবাগান, বারিধারা, ধানমন্ডি, ঝিলপাড়, ঘাট পাড়, আমতলা, সাঁতারকুল, শ্যামলী, কলাবাগান, শাহবাগ, মতিঝিল, হাতিরঝিল, কদমতলী, খিলক্ষেত, গেন্ডারিয়া, পল্লবী, খিলগাঁও- এমনিভাবে ঢাকার অনেক জায়গার নামের সঙ্গেই বাগান, পতিত জমি, বাগান, ঝিল, বিল, খাল ইত্যাদির যোগ আছে। মোগল আমলে ঢাকার বিস্তৃতি ছিল গুলিস্তান পর্যন্ত, ব্রিটিশ আমলে সেটা শাহবাগ ছাড়িয়ে বেশিদূর আর যায়নি। বাকি জায়গাগুলো ছিল জলাভূমি, এসব জায়গায় শুকনো মৌসুমেও এক মানুষ সমান পানি থাকত। মানে নৌকা চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় নাব্যতা থাকত সারা বছরজুড়েই।"
সালেহ শফিক
06 December, 2023, 10:50 am
Last modified: 06 December, 2023, 10:50 am

'ঢাকার একটি গুদারাঘাট চিহ্নিত আছে জেমস রেনেলের মানচিত্রেও। সেটি ছিল কারওয়ানবাজারে আম্বর শাহ মসজিদের কাছে, ১৯৪০ সালের সিএস নথিতেও এর উল্লেখ দেখা যায়। কারওয়ানবাজারে আরেকটি গুদারাঘাট ছিল এফডিসির কাছে। এটি সচল ছিল আশির দশকের শেষ অবধি,' বললেন ডেল্টা অ্যান্ড রিভার রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) প্রজেক্ট লিড মোহাম্মদ এজাজ।

তিনি যোগ করলেন, 'আমরা যদি মোহাম্মদপুরের দিক থেকে আসি তবে শিয়া মসজিদের কাছে ছিল একটি গুদারাঘাট, একটি গুদারাঘাট ছিল জাপান গার্ডেন সিটির জায়গাটায়, আদাবরে আরেকটি, শ্যামলী থেকে একটু এগিয়ে হক সাহেবের গ্যারেজে আরো একটি, তারপর গাবতলী থেকে টোলারবাগ, মিরপুর ১ নং হয়ে পল্লবী পর্যন্ত জায়গাটুকুতে কম করেও ২০টি গুদারাঘাট ছিল। এখনো আলব্দী থেকে মিরপুর ১২ নং, আগুন্দা থেকে শিয়ালবাড়ি, দিয়াবাড়ি থেকে বাগসাতরা, বড়বাজার থেকে মিরপুর, খৈদারটেক থেকে গাবতলী, দারুসসালাম থেকে শ্যামলী এবং মোহাম্মদপুর থেকে বছিলা গুদারা পারাপারের কথা পুরানো অনেক লোকের মুখে শুনতে পারবেন। আমার বাড়িটা যে জায়গায় (পশ্চিম আগারগাঁওয়ে) দেখছেন, এর জমি উঁচু করার জন্য আমরা নৌকাতে করেই মাটি এনেছি। ঢাকার ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনে ১৯৯১ সালকে মাইলফলক ধরা যায়। শহর রক্ষা বাঁধ হওয়ায় বাঁধের ভিতরকার জলাভূমি নির্বিচারে ভরাট করে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। বেসরকারী আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো তো বটেই সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানও জলাভূমি ভরাট করেছে।'

ঢাকায় ছিল টেক আর পাড়া

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে নদী ও জলাশয় দখলদার ৫৫ হাজারের বেশি। তার মধ্যে কেবল ঢাকাতেই ৯ হাজার প্রায়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, সারাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৪২ হাজার একর জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে, শুধু ঢাকাতেই বছরে গড়ে ৫ হাজার ৭৫৭ একর জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয় পুকুরের সংখ্যার হিসাব থেকে। মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের হিসাব বলছে, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পুকুর ছিল ২০০০টি। আরডিআরসি বলছে, পুকুর, বিল, লেক মিলিয়ে এখন  টিকে আছে ৩০০টির কিছু বেশি। এগুলোর মধ্যে অর্ধেক সরকারী মালিকানায়, অর্ধেক ব্যক্তি মালিকানায়। সরকারি মালিকানার জলাশয় ভরাট করে অফিস হচ্ছে আর ব্যক্তি মালিকরা শপিংমল, নয়তো উঁচু আবাসিক ভবন গড়তে চাইছেন। অথচ নীতিমালায় আছে কোনো জলাশয়ই ভরাট করা যাবে না।  কোনো একটি শহরে ১৪-২০ ভাগ জলাশয় থাকতে হয়, সেখানে আমাদের শহরে আছে মোটে ২-৩ ভাগ। এরপরও যদি ভরাট চলতে থাকে তবে নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা থাকবে না।

'ঢাকার জায়গাগুলোর নাম খেয়াল করে দেখুন- কাঁঠালবাগান, বারিধারা, ধানমন্ডি, ঝিলপাড়, ঘাট পাড়, আমতলা, সাঁতারকুল, শ্যামলী, কলাবাগান, শাহবাগ, মতিঝিল, হাতিরঝিল, কদমতলী, খিলক্ষেত, গেন্ডারিয়া, পল্লবী, খিলগাঁও- এমনিভাবে ঢাকার অনেক জায়গার নামের সঙ্গেই বাগান, পতিত জমি, বাগান, ঝিল, বিল, খাল ইত্যাদির যোগ আছে। মোগল আমলে ঢাকার বিস্তৃতি ছিল গুলিস্তান পর্যন্ত, ব্রিটিশ আমলে সেটা শাহবাগ ছাড়িয়ে বেশিদূর আর যায়নি। বাকি জায়গাগুলো ছিল জলাভূমি, এসব জায়গায় শুকনো মৌসুমেও এক মানুষ সমান পানি থাকত। মানে নৌকা চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় নাব্যতা থাকত সারা বছরজুড়েই। তখন ধানমন্ডি, মিরপুর, গুলশান, বারিধারার মতো জায়গাতে ছিল টেক বা পাড়া। বিচ্ছিন্ন সব উঁচু উঁচু টিলা ছিল যেখানে গড়ে উঠেছিল একেকটি গ্রাম। কিছু ছিল মেঠোপথ আর বাকিটা নৌকায় করেই মানুষ যাতায়াত করত। তাই গুদারাঘাট বা ঝিলপাড় বলে জায়গার নাম হয়েছিল অনেক,' বলছিলেন মোহাম্মদ এজাজ। 

গুদারাঘাট ছিল এফডিসির কাছেও; ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

ঢাকার পুরানো দিন

১৯২৮-২৯ সালে ঢাকার মগবাজার এলাকার স্মৃতিচারণা করেছেন কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত। তিনি লিখেছেন, 'যখন প্রথম বাড়ি করে আমার জ্যাঠামশাই ও কাকারা সপরিবারে এখানকার নবনির্মিত বাড়িতে চলে যান তখন পর্যন্ত এলাকাটি ছিল পল্লীগ্রামেরই অংশ।… মুশকিল এই ছিলো যে কাছাকাছি কোথাও চা-সিগারেটের দোকান বা ছোট মুদিখানা ভিন্ন আর কিছু ছিল না। আমার ভাইদের বা বাড়ির ঠাকুরকে সাইকেলে চেপে পুরনো শহরে রায়সাহেবের বাজারে গিয়ে দেখেশুনে মাছ, মশলা ও সবজি কিনে ফিরতে হতো। বাড়িতে দুধের অভাব ছিল না, পল্লীতে কোনো কোনো গৃহস্থ ঘরে ডিমও পাওয়া যেত। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যখন পথ কর্দমাক্ত, সাইকেল চালিয়ে নেওয়া অসম্ভব, তখন বাজারে যাওয়ার কিছুকালের বিরতি ঘটতো।'

ইতিহাস বলছে, এখন যেখানে বঙ্গভবন সেখানে সুলতানি আমলে এক সুফিসাধক বাস করতেন। পরে একসময় সুলতানের গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন সাধক ও তার অনুসারীরা। স্থানটি শীঘ্রই মাজারে পরিণত হয়। তারপর ব্রিটিশ আমলে এখানে ছিল মানুক হাউস। আর্মেনীয় জমিদার মানুকের নামানুসারে এর নামকরণ হয়ে থাকতে পারে। ঢাকার নবাব খাজা আব্দুল গনি মানুকের কাছ থেকে জায়গাটি কিনে নেন এবং একটি বাংলো তৈরি করেন যার নাম দেওয়া হয় দিলখুশা। জনশ্রুতি আছে, নবাব বাড়ির মহিলারা দিলখুশা থেকে মিরপুর ১ নম্বরের শাহ আলী বোগদাদীর মাজারে যেতেন মানত পূরণের উদ্দেশে আর পুরো পথটা তারা যেতেন নৌকায় চেপে।

জনশ্রুতি আছে, নবাব পরিবারের নারীরা দিলখুশা থেকে মিরপুরের শাহ আলী মাজারে যেতেন নৌকায় করে। এখনো মাজারের কাছের এক জায়গা গুদারাঘাট নামে পরিচিত; ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

নির্বিচারে ভরাট হয়েছে

'মিরপুর ১ নম্বরে গুদারাঘাট নামে একটি জায়গার অস্তিত্ব এখনো আছে। রিকশাওয়ালাদের বললে পৌঁছে দেয়। দিয়াবাড়ির বটতলা পর্যন্ত তখন চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। উত্তরার পুরোটাই গড়ে তোলা হয়েছে জলাভূমির ওপর। ইস্টার্ন হাউজিং, নিকেতন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা উদ্যান, স্বদেশ প্রপার্টিজ, আশিয়ান সিটি, আমেরিকান সিটি ইত্যাদি ব্যক্তি মালিকানাধীন হাউজিংও গড়ে তোলা হয়েছে জলাভূমি ভরাট করেই। এবার আসি পূর্ব ঢাকার দিকে। গুলশান, কুড়িল, কাজীবাড়ি, বারিধারা বা সাতারকুল, বাড্ডা পর্যন্ত বলা যায় অনেকটাই ছিল জলাঞ্চল। কুড়িলে বড় গুদারাঘাট ছিল, কাজীবাড়িতে ছিল, এখন ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি যেখানে মানে আফতাবনগরে বড় গুদারাঘাট ছিল। গুদারাঘাট ছিল খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। এগুলো ২০০১-২০০২ তেও সচল ছিল। বারিধারা জে ব্লক মানে আমেরিকান অ্যাম্বেসির উল্টোদিকে বড় একটি গুদারাঘাট ছিল। নতুনবাজারে গুদারাঘাট ছিল। গুলশান ১ থেকে ২ নম্বর যাওয়ার পথে যেখানে ওয়াটার বাসগুলো থামে তার কাছে একটি জায়গাকে এখনো লোকে গুদারাঘাট বলেই ডাকে। এরপর আরো পূবদিকে যান, ডেমরা থেকে ত্রিমোহিনী পর্যন্ত ১০ থেকে ১২টি গুদারাঘাট ছিল। এর অর্থ  ঢাকার একটি বড় অংশ জুড়েই চলাচলের প্রধান মাধ্যম ছিল নৌপথ,' বলছিলেন আরডিআরসি'র প্রজেক্ট লিড মোহাম্মদ এজাজ।

তিনি আরো যোগ করলেন, 'ঢাকার ওপর চাপ বাড়তে থাকে পাকিস্তান আমলে। দেশভাগের ফলে হাজার হাজার মানুষ ভারতের মুর্শিদাবাদ, বিহার বা ত্রিপুরা থেকে ঢাকায় চলে আসে। তখন তাদের জন্য মোহাম্মদপুর, মিরপুরে সরকার আবাসিক এলাকার জন্য জমি নির্বাচন করে। কিন্তু সেটাও ঢাকার ভূপ্রকৃতির ওপর বড় কোনো প্রভাব তৈরি করতে পারেনি। বড় প্রভাব তৈরির সূচনাকাল ধরা যায় আশির দশককে। সড়ক, মহাসড়ক বানানোর নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছিল তখনকার সরকার। এরপর শহর রক্ষা বাঁধ দেওয়া হলো। বাঁধের ভিতরে যত জমি ছিল তার কোনটা ভরাট করা যাবে আর কোনটা যাবে না তা নিয়ে কোনো নীতিমালা বা গাইডলাইন ছিল না। তখন অনেক সরকারি আবাসিক এলাকা আর অফিসও তৈরি হয়েছে জলাশয় ভরাট করে। ঐ যে বলছিলাম টেক বা পাড়ার কথা, এগুলোতে যারা বসবাস করতেন তারা কিন্তু এদিক ওদিক সরে পড়তে বাধ্য হলেন। বাইরে থেকে ধনী ব্যক্তিরা এসে জমি কিনতে থাকল, স্থানীয় প্রভাবশালীরাও আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার জন্য পানি কিনতে থাকল একরের পর একর, পাশাপাশি চলতে থাকল জলাশয় ভরাট। নব্বইয়ের পুরো দশকজুড়ে আমরা দেখলাম জলাশয় ভরাটের এক মহোৎসব। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউ অব প্ল্যানার্স তাদের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখিয়েছে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি জলাশয় ভরাট হয়েছে ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে। শহর গড়ার তাগিদে কিছু কৃষি জমি নগরে আত্মীকরণ হবে তা টলারেবল, কিন্তু ব্যক্তিগত মালিকানাধীন আবাসনগুলো যেভাবে নির্বিচারে ভরাট করেছে তা থামাতে রাজউক, জেলা প্রশাসন কেউ উদ্যোগ নেয়নি। তারপর যখন নীতিমালা তৈরি হলো তখনো কি ভরাট বন্ধ হয়ে গেছে? হয়নি তো। গেন্ডারিয়ার পুকুর ভরাট বন্ধ করতে পরিবেশকর্মীরা এই সেদিনও মানববন্ধন করেছে। তাহলে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, এর দায়ভার কে নেবে?'

জাপান গার্ডেন সিটি যেখানে গড়ে উঠেছে সেখানেও ছিল গুদারাঘাট; ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

যারা নৌকায় চেপেছিলেন

সকালটা মেঘলা ছিল। দুপুরের আগে রোদ ঝাঁপিয়ে পড়ল। ঘুরতে ঘুরতে রিকশাওয়ালা আজিজউদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় মিরপুর ৬ নম্বরের আজমল হাসপাতালের কাছে। ২১ বছর ধরে তিনি ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন। থাকেন কালশীতে। তিনি মিরপুর ১ নম্বরের গুদারাঘাটের কথা জানেন, গিয়েছেনও কয়েকবার। কালশী থেকে বাউনিয়া বাঁধ পর্যন্ত আরেকটি গুদারাঘাটও তিনি দেখেছেন প্রথম যখন ঢাকায় এসেছিলেন। মাঝেমধ্যে পারও হয়েছেন।

আজিজউদ্দিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে আরো কিছুদূর গিয়ে তাসলিমা বেগমকে পেলাম। বাড়ি তাদের বরিশাল। তবে মগবাজারে নানাবাড়ি ছিল বলে ঢাকায় যাওয়া-আসা ছিল ছোটবেলা থেকেই। বিয়ের পর পাকাপাকিভাবে ঢাকার মিরপুরে বসবাস শুরু করেন, চল্লিশ বছর হয়েছে তার বিয়ের বয়স। তাদের মুদি দোকান ছিল মিরপুর ১১ নম্বরে। মাঝেমধ্যে তাই যাতায়াত ছিল, একবার বোনের জন্য একটা জমি দেখতে গিয়েছিলেন ভাষানটেক। ১১ নম্বর বাজারের পেছন থেকে ভাষানটেক পর্যন্ত নৌকায় করেই গিয়েছিলেন সেবার।

এরপর বায়তুল মোশাররফ মসজিদের কাছের এক চায়ের দোকানে দুজন বৃদ্ধকে পেলাম। তারা বরিশালে মেয়র নির্বাচনের খবর দেখছিলেন টিভিতে। একটু ফাঁক পেতেই আমি তাদের আলোচনায় ঢুকে পড়লাম। জানতে চাইলাম, ঢাকার ভিতর কে কোথায় নৌ চলাচল দেখেছেন? বেশি বয়স্ক যিনি, তিনি বললেন, হাজারীবাগ থেকে বসিলা পর্যন্ত নৌকা চলতে দেখেছেন। দ্বিতীয়জন তেজগাঁওয়ের এক গুদারাঘাটের (নির্দিষ্ট জায়গাটি মনে করতে পারেননি) কথা জানালেন যেটায় তিনি নৌকায় করে এসে নেমেছিলেন একবার।

৬ নং কাঁচাবাজারের কাছে এক কাঁঠালবিক্রেতা পাওয়া গেল যার বয়স আশির কাছে। '৬৮ সালের  পাকিস্তান আমলের কথাও তার স্মরণে আছে। গুলশান থেকে হেঁটে মিরপুর চিড়িয়াখানায় আসতেন চকের (ধানী জমির আইল) মধ্য দিয়ে। মিরপুর ৭ নম্বরের পর থেকে রূপনগর আবাসিক, আরামবাগ এলাকার বিস্তৃত অঞ্চলব্যাপী তিনি জলাভূমি দেখেছেন। এখন যেখানে ক্রিকেট স্টেডিয়াম সেখানে ছিল গরুর খামার, গরুর জন্য কচুরিপানাও জোগাড় হতো আশপাশের জলাভূমি থেকেই। তিনি উত্তর-দক্ষিণে দেখিয়ে বলছিলেন, 'ওই যে বড় বাড়িটা দেখছেন সেখানে একটা পুস্কনি (পুকুর) ছিল, কোনার ওই বাড়িটাও পুস্কনির ওপরই তৈরি হইছে।'

মনে হলো তাকে নিয়ে আধঘণ্টা হাঁটলে নিদেনপক্ষে ১০-১২টা পুকুরের খবর মিলবে।

মানুষগুলো কোথায় গেল

আমাদের দেশে জলাধার রক্ষা আইন হয়েছে ২০০০ সালে। এতে বলা হচ্ছে-কোনো অবস্থায় খাল, বিল, নদী-নালা, পুকুর ও জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকাজেও প্রাকৃতিক জলাশয়, জলাধার, খাল-নদী ইত্যাদির স্বাভাবিকতা নষ্ট করা যাবে না। জনস্বার্থে ভরাট করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।

এজাজ বলছেন, 'অন্য অনেক আইনের মতো এরও প্রয়োগ নেই। অথচ প্রয়োগ ছাড়া আইন কতটাই বা গুরুত্ব রাখে। গবেষণায় আমরা দেখেছি, তুরাগ নদীতে ভুল সীমানা পিলারের কারণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জলাঞ্চল ভরাটের বৈধতা পেয়ে গেছে। আশুলিয়াতে অনেকগুলো জেলে পাড়ার অস্তিত্ব ছিল, এখনো কিছু আছে। কিন্তু জল না থাকলে জেলের চলবে কেন? বুড়িগঙ্গার ২২ কিলোমিটারে আমরা ৯৩টি গুদারাঘাট পেয়েছি। তুরাগ নদীতে পেয়েছি দেড়শ থেকে দুইশ। পানি না থাকলে বা নষ্ট হয়ে গেলে মানুষগুলো যাবে কোথায়? জীবিকা যেমন সহস্র বছর ধরে গড়ে ওঠা সংস্কৃতিও তেমন ধ্বংসের মুখে।'

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, বংশী নদীর মাঝিরা (সাভার বা ধামরাই এলাকা) লোক পারাপার করে তাৎক্ষণিক মজুরি নিত না। বিনিময়ে ধান বা পাট মৌসুমে তাঁরা জমি বা বাড়িতে গিয়ে ধান-পাট সংগ্রহ করত। বছর খোরাকী হিসাবে ধান মজুদ রেখে পাট বিক্রি করে দিত বাজারে। পাট বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ  ব্যয় করত অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে। তাই তাদের বলা হতো পাটনি।

শিয়া মসজিদের কাছে ছিল গুদারাঘাট; ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

এর শেষ কোথায়

জলাশয় হারিয়ে যাওয়ায় মানুষগুলোর জীবনযাত্রার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে। তারা এখন রিকশাচালক বা টং দোকানী অথবা দিশেহারা। মোহাম্মদ এজাজের কাছে জানতে চেয়েছিলাম জলাশয় ভরাটের কারণে ঢাকার ক্ষতি কতটা হলো? তিনি বললেন, 'মানুষ বাস করবে বলেই তো শহরটা গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু শহরটা যদি পানিশূন্য হয়ে যায় তবে মানুষ থাকবে কি করে? ইতিমধ্যেই শহরের পানির স্তর অনেক নীচে নেমে গেছে। অনেকগুলো ডিপ টিউবওয়েল বেকার হয়ে পড়েছে। পানি আনতে হচ্ছে মেঘনা নদী থেকে। গুগল সার্চ করলে দেখতে পাবেন আমেরিকার বেশ কিছু শহর পরিত্যক্ত হয়েছে কেবল পানির অভাবেই । তারপর আসুন তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে। গেল ৩০ বছরে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি। ২০৫০ সালের কথা ভাবলে তো শিউরে উঠতে হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত অসুখে শিশু মরবে, বৃদ্ধ বাঁচবে না। এই শহরে প্রতি বছরে ৭ লাখ মানুষ বাড়ে, তদের বেশিরভাগই ক্লাইমেট রিফিউজি, এক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে তারা আরেক দুর্যোগে এসে পড়ছে। অথচ পরিকল্পনামাফিক গড়ে তুললে পানি, প্রকৃতি নিয়ে দারুণ এক শহর হতে পারত ঢাকা।'

আরো জানতে চাইলাম, কেউ কেউ বলেন মধ্যপ্রাচ্যে তো গরম এর চেয়ে বেশি, সেখানে মানুষ থাকছে কিভাবে?

এজাজ: মধ্যপ্রাচ্য তো ডেল্টা (বদ্বীপ) নয়। আমাদের শরীর-সংস্কৃতি পানির মাঝেই বেড়ে উঠেছে। আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি, চাইলেই কি এখন রুটি-খেজুরের বাঙালি হয়ে যেতে পারব? এরকম প্রশ্ন তাই অবান্তর।

তাহলে কি হারানো জলাধার ফিরিয়ে আনাই সমাধানের উপায়?

এজাজ: ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন কাজ হবে। তবে নতুন যেসব শহর, উপশহর (কেরানীগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর বা নারায়ণগঞ্জে) গড়ে উঠছে সেখানে জলাধার নিয়মমাফিক সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করা হোক। এটা বাঁচার জন্যই দরকার, বিলাসিতার জন্য নয়।

Related Topics

টপ নিউজ

গুদারাঘাট / জলাশয়

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • কাল থেকে পাওয়া যাবে নতুন টাকা, সংগ্রহ করবেন যেভাবে
  • দেশের প্রথম মনোরেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে: মেয়র শাহাদাত
  • আগামী বছর থেকে অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হচ্ছে
  • বাস-ট্রাক, ট্যাক্সির অগ্রিম কর বাড়ছে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত, পরিবহন ব্যয় বাড়ার শঙ্কা
  • মেজর সিনহা হত্যা মামলা: প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহাল
  • বাজেটে প্রাথমিকে বরাদ্দ কমছে, বাড়ছে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষায়

Related News

  • গাজীপুরে দুই যুগে কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ বন ও জলাশয়
  • জলাশয় ভরাট করে বিএডিসির ল্যাব নির্মাণ অবৈধ: হাইকোর্ট
  • উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ করছে বিএডিসি

Most Read

1
অর্থনীতি

কাল থেকে পাওয়া যাবে নতুন টাকা, সংগ্রহ করবেন যেভাবে

2
বাংলাদেশ

দেশের প্রথম মনোরেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে: মেয়র শাহাদাত

3
অর্থনীতি

আগামী বছর থেকে অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হচ্ছে

4
অর্থনীতি

বাস-ট্রাক, ট্যাক্সির অগ্রিম কর বাড়ছে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত, পরিবহন ব্যয় বাড়ার শঙ্কা

5
বাংলাদেশ

মেজর সিনহা হত্যা মামলা: প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহাল

6
অর্থনীতি

বাজেটে প্রাথমিকে বরাদ্দ কমছে, বাড়ছে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষায়

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab